“Save Earth Save Bangldaesh, Season – 3” বাংলাদেশের পরিবেশ,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সর্ববৃহৎ সেচ্ছাসেবী সংগঠন “বিডি ক্লিন” কতৃক আয়োজিত একটি সচেতনতামূলক প্রদর্শনী, যা ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়েছে।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদর্শিত এই প্রদর্শনীটি হয়েছে রাজধানীর বনানী এলাকায় অবস্থিত ওয়্যারলেস রোডের বিটিসিএল(টিএন্ডটি) মাঠে। বিডি ক্লিনের তৎকালীন ৪৪,০০০ এরও বেশি সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে সারাদেশ থেকে ৪০ টন প্লাস্টিক ও ৩ কোটি পরিত্যক্ত সিগারেটের ফিল্টার, প্যাকেট এবং ১ টন পলি এবং ফয়েল পেপার দিয়ে তৈরী নানা শিল্পকর্ম ও স্থাপনা প্রদর্শিত হয় উক্ত প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীর উদ্দ্যেশ্যঃ নানা শিল্পকর্ম ও স্থাপনার মাধ্যমে জনমানুষের মাঝে সিগারেটের ফিল্টার ও প্লাস্টিক এর কুফল সম্পর্কে অবহিতকরণ এবং সচেতনতা সৃষ্টি; যত্রতত্র ময়লা না ফেলে একটি নির্দিষ্ঠ স্থানে ময়লা ও বর্জ্য ফেলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ।
প্রদর্শনীর ব্যপ্তিকালঃ ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত
সর্বমোট পর্যবেক্ষকঃ ১০,০০,০০০+ সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উক্ত প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করেন।
স্থাপনাসমূহঃ
প্লাস্টিকের রাজ্যে আমন্ত্রণঃ
সারা বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত যে পরিমান প্লাস্টিক বোতল, সিগারেট ফিল্টার, প্লাস্টিক মোড়ক ছুড়ে ফেলা হচ্ছে এবং এর জন্য যে পরিমান বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে তার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। বৃক্ষনিধন ও প্লাস্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ছুড়ে ফেলার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবী পরিনত হবে আমাদের এই প্লাস্টিকের রাজ্যের মতোই।
স্বাগতম, আমাদের প্লাস্টিকের রাজ্যে
গাছের গুড়ি ও মাছের প্রতিকৃতিঃ
প্রতি বছর সারাবিশ্বে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বৃক্ষ নিধন করা হয় শুধু মাত্র সিগারেট উৎপাদনের জন্য। যার প্রতীকী স্বরুপ ৬ টি বৃহৎ আকৃতির গাছের গুড়ির উপর নির্মিত হয়েছে স্থাপত্য। প্রথমেই একটি নদীর মাছ। মাছে ভাতে বাঙালী এই প্রবাদটিক বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য বহন করে। অথচ আমাদের অসচেতনতা ও অপরিচ্ছন্ন মানসিকতার কারণে আজ আমরা আমাদের মাছে ভাতে বাঙালী ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছি। কিন্তু, আজ যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল, প্যাকেট, ফিল্টার থেকে নির্গত দূষিত কেমিক্যাল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাছের প্রজনন, হারাচ্ছে তার স্বাদ এবং মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এর যথাযথ পুষ্টিগুন থেকে। যারই প্রতীকী হিসেবে নির্মিত হয়েছে এই মাছের প্রতিকৃতি। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই জনসাধারণকে কি অসম্ভব ক্ষতি আমরাই আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের জন্য করে রেখে যাচ্ছি আমরা।
অতএব, যত্রতত্র ময়লা ফেলে পানি দূষণের মাধ্যমে মাছেদের ক্ষতির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজেদের ক্ষতি বন্ধের শপথ নিন আজই
কচ্ছপ এর প্রতিকৃতিঃ
আমাদের পৃথিবীর মোট ১ ভাগ স্থল ও ৩ ভাগ জল। যার একটি বৃহৎ অংশ হচ্ছে সমুদ্র। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সামুদ্রিক প্রাণীর ভূমিকা অপরিহার্য। শুধুমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্যের কারনে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যূবরণ করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক প্রাণী হচ্ছে কচ্ছপ। খাদ্য অথবা শিকার হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ভুল করে খাওয়ার পর এই সামুদ্রিক প্রাণীকুল মৃত্যুবরণ করছে। সামুদ্রিক প্রাণীকুলের এই ক্ষতিকর ভয়াবহতা তুলে ধরতেই তৈরী করা হয়েছে এই কচ্ছপ প্রতিকৃতি। আমরা এই প্রতিকৃতি দ্বারা জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সকল প্রাণীকুলের অবদানের কথা। তাই, আমাদের সবাইকে সকল প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল ও চিন্তাশীল হতে হবে। আমাদের দ্বারা পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে এই প্রাণীকুল যেন বিলুপ্তির পথে চলে না যায় সে বিষয়ে আমাদের সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।
অতএব, আসুন যত্রতত্র ময়লা, আবর্জ্যনা না ফেলে নির্দিষ্ঠ স্থানে ফেলি, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করি
মস্তিষ্কের প্রতিকৃতিঃ
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে মানব মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। মূলত মাইক্রো প্লাস্টিক রক্তের মাধ্যমে মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে মানব মস্তিষ্কে নিজেকে বিকশিত করতে পারে। এছাড়াও বাতাসে ভাসমান ন্যানো প্লাস্টিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে হৃদপিণ্ড ও ব্রেইনে পৌছাতে পারে। ফলশ্রুতিতে এই মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের দেহে বিদ্যমান রোগগুলোকে আরোও বেশি প্রবল ও তীব্র করে, ডিএনএ এর মধ্যে পরিবর্তন আনয়ন করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রেইন ক্যান্সারের কারন হিসেবে প্রতিয়মান হয়। এছাড়াও, খাদ্যের মাধ্যমেও প্লাস্টিক ও সিগারেট ফিল্টার থেকে নির্গত দূষিত কেমিক্যাল মানব দেহ তথা মস্তিষ্কে পৌছে আমাদের ক্ষতি সাধন করে। অজানা এই ক্ষতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আমার এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করতেই নির্মিত এই প্রতিকী মানব মস্তিষ্ক।
অতএব, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিকের মত ক্ষতিকর দ্রব্য ফেলা বন্ধ করি, সুস্থ মস্তিষ্কে সুস্থ চিন্তা করি
গ্রেনেডের প্রতিকৃতিঃ
আমাদের অসচেতনা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল এর ফলে একদিন আমাদেরই এই আদরের, ভালোবাসার পৃথিবী পরিনত হবে প্লাস্টিক নামক ভয়াবহ গ্রেনেডের রুপে। যার মূল উপকরণ হচ্ছে এই সমস্ত প্লাস্টিক বর্জ্য যার বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে সমগ্র দেশ সমগ্র জাতি এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ।
গ্রেনেড রুপে পৃথিবীকে বাঁচাবার জন্য হলেও সচেতন হতে হবে আমাদের
পাতাহীন বটগাছ এর প্রতিকৃতিঃ
প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ এই বটগাছ। মূলত এই বট গাছটিকে “প্রকৃতির মা” হিসেবে প্রতিয়মান করা হয়েছে। মা যেমন তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে নিঃস্বার্থভাবে তার লালন পালন করে সকল দুঃখ কষ্ট নির্বিঘ্নে ও নিশ্চুপে সহ্য করে সকল বিপদে ঢাল হয়ে আগলে রাখে ঠিক তেমনিভাবে বটবৃক্ষ শত শত বছর ধরে তার বিশালতা দিয়ে আগলে রাখছে এই ধরিত্রিকে। অথচ আমরা সেই মায়ের সন্তানেরা অসচেতনতায়, অজ্ঞতায় ও সেচ্ছাচারীতায় যত্রতত্র প্লাস্টিক নামক বিষক্রিয়া মাটিতে নিক্ষেপ করে নষ্ট করছি মাটির উর্বরতা, ব্যহত করছি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, পৌঁছে দিচ্ছি ফলমূলে এর বিষক্রিয়া এবং বাধ্য করছি মাতৃস্বরুপ বটবৃক্ষকে পত্রবিহীন বটবৃক্ষে পরিনত করতে।
মঞ্চ ও বোতলঃ
মঞ্চে অবস্থিত বোতলটিকে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যা মূলত মঞ্চের নান্দনিক সৌন্দর্য্য তুলে ধরার জন্য তৈরী করা হয়েছে। যেহেতু এই প্রদর্শনীটি একটি প্লাস্টিক বর্জ্যের ভয়াবহতা ও প্লাস্টিক ব্যবহারের পরবর্তী সচেতনতা সম্পর্কিত প্রদর্শনী তাই এটির গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই বৃহৎ আকৃতির প্রতীকি প্লাস্টিক বোতলটি নির্মান করা হয়েছে।
অতএব, যত্রতত্র ময়লা ফেলে পানি দূষণের মাধ্যমে মাছেদের ক্ষতির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজেদের ক্ষতি বন্ধের শপথ নিন আজই
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল সোনার বাংলাদেশের। জাতির পিতার সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ, আমাদেরই অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারনে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গতিশীল ধারাকে ব্যহত করছি প্রতিনিয়ত, ঘটাচ্ছি পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়, ডেকে আনছি জাতির জন্য এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। আর এই ভয়ানক ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেই অবাক তাইকিয়ে আছেন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সোনার বাংলা গড়ার কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
অতএব, আসুন জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি দেশের জন্য, সচেতন হয়ে অবদান রাখি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গঠনে